Wednesday, November 13, 2024

ভালোবাসার মানুষ সম্পর্কে যত কম জানবেন, তার প্রতি আগ্রহ তত বেশি থাকবে।


 ভালোবাসার মানুষ সম্পর্কে যত কম জানবেন, তার প্রতি আগ্রহ তত বেশি থাকবে। সব জেনে যাওয়ার মানেই সকল আগ্রহের পরিসমাপ্তি।

যত বেশি জেনে যাবেন, দেখবেন, ধীরে ধীরে তার প্রতি তৈরী হচ্ছে অনাস্থা, অবিশ্বাস আর ভরসাহীনতা। অনাগ্রহ বা নিঃস্পৃহতার অশুভ সূচনাও সেখান থেকেই।

একটা সময় পর গিয়ে দেখবেন, গভীর থেকে গভীরতর কোনও সম্পর্কও কাচের গ্লাসের মতো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। মন সেসময় গভীর অসুখে ডুবতে থাকে। আহা, বাঁচতে বড়ো কষ্ট হয় তখন!


সৌন্দর্য দেখতে হয় দূর থেকে, যত কাছ থেকে দেখবেন, তত বেশি ত্রুটি ধরা পড়বে। সৌন্দর্যের বিচার হয় অখণ্ডতায়, 'খণ্ডিত সৌন্দর্য' বলে কিছু নেই।

যে ছবি যত বেশি জুম করবেন, সে ছবির ফাটা দাগ তত বড়ো বড়ো করে দেখা যাবে। ছবির সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে ছবিকে দেখতে হয় সামগ্রিকভাবে, ভেঙে ভেঙে নয়।

এজন্য দাগ দেখতে না চাইলে ছবি জুম করতে নেই, এবং মানুষ সম্পর্কেও বেশি জানতে নেই। জানলে উলটো নিজের মধ্যেই মানসিক যন্ত্রণা বাড়তে থাকবে। যে ছবিটা ডিলিট করতেই পারবেন না, সে ছবিটা জুম করে দেখেও-বা কী হবে কিছু আফসোসের বৃদ্ধি ছাড়া! সরান ও সরুন, কিংবা মানান ও মানুন। ব্যস্! মাথায় রাখুন, পৃথিবীতে কারুর‌ই সবকিছু আপনার মনের মতো হবে না। আপনার‌ও সবকিছু কারুর মনের মতো নয়।


খেয়াল করলে দেখবেন, শারীরিক সৌন্দর্যের টানে আমরা কার‌ও কাছে গেলেও, পরবর্তীতে মানসিক সৌন্দর্যটাই বড়ো হয়ে দাঁড়ায়। সে মানুষটা মানসিকভাবে ঠিক কতটুকু সুন্দর, ব্যাপারটার গুরুত্ব তখন তার শারীরিক সৌন্দর্যকে বহুগুণে ছাড়িয়ে যায়। মূলত মনের টানেই দুজন মানুষ পাকাপোক্তভাবে বাঁধা পড়ে।

এজন্যই অনিন্দ্যসুন্দর দুজন মানুষ‌ বিয়ে কিংবা সম্পর্কে জড়ানোর পরও কখনও কখনও তা দুবছরও টেকে না। প্রকৃত সৌন্দর্য বরাবরই দৃষ্টির অগোচরে থেকে যায়। সময় হলে সময় মুখ খোলে।

আবার অসুন্দর নিতান্তই সাদামাটা কোনও দুজন মানুষের সম্পর্ক টিকে যায় দুযুগ কিংবা তারও বেশি। শরীরের টানের পরিসমাপ্তি যেখানে, সেখান থেকেই মনের টানের অপূর্ব সূচনা। আর যদি সে সূচনার কোনও সুযোগ না থাকে, তবে সম্পর্কের ইতি সেখানেই।


অভিজ্ঞতা বলে, মানুষ সম্পর্কে কম জানাই মানুষের প্রতি ভালোবাসাকে অক্ষুণ্ন রাখার শ্রেষ্ঠ পথ। জানতে হয় মানুষের মনটাকে, বাহ্যিক অভ্যেসগুলিকে নয়। শরীরের সতীত্ব খুঁজতে খুঁজতে মানুষ মনের সতীত্বের খোঁজটা আর পায় না।

যাকে ভালোবাসেন, সে নেশা করে, কিংবা সম্পর্কের বাইরে গিয়ে অন্য কারও সাথে ফ্লার্ট করে, অথবা মানুষটি বেশ অহংকারি বা জেদি। এমন ব্যাপারগুলো সম্পর্কে ঢোকার আগে জানতেন না বলেই তাকে বড়ো সুন্দর লাগত। সময়ের প্রবাহে যখন ধীরে ধীরে ব্যাপারগুলো জানতে ও বুঝতে শুরু করবেন, তখনই কাটতে শুরু করে মোহের বিস্তৃত জাল। তখন মানুষটিকে আর আগের মতো সুন্দর লাগবে না; দেখবেন, আগের মতো মোহিত করছে না তার মিষ্টি কথা, প্রেমালাপ কিংবা আরও অনেককিছুই। গভীরতাতেই যত কষ্টের আবাদ।


একসময় আবিষ্কার করবেন, তার পুরনো একটা ছোট্টো মেসেজ আপনাকে যতটা আন্দোলিত করত, আনমনেই ফিক করে হেসে বলতেন, 'আমার পাগলটা!', এখন আর আগের মতো তার কোনও কিছুই আপনাকে উদ্বেলিত করছে না। এমনকি সেই একই মেসেজ দেখে ভ্রু কুঁচকে আনমনেই বলে উঠছেন, 'ধুর ছাই!'।


সম্পর্ককে বাঁচাতে চাইলে যত্ন নিতে হয়। বদলাতে হয় এবং বদলেও যেতে হয়। যে সম্পর্ক আপনাকে বদলাতে পারে না, কিংবা নিজ থেকেই আপনি পালটে যাচ্ছেন না যে সম্পর্কে, তখন ধরে নেবেন, আপনি আদতে কোনও সম্পর্কেই নেই। স্রেফ একটা সময়ের চুক্তিতে আবদ্ধ আছেন মাত্র, যে চুক্তিটি শেষ হয়ে যাবে মেয়াদ ফুরলেই। কিংবা তারও আগে! অবশ্য দুপক্ষের এতে আপত্তি না থাকলে এমন সম্পর্কে থেকেও আনন্দে বাঁচা যায়। বরং, স্রেফ কামের সম্পর্কে প্রেম এলেই শুরু হয় যত বিপত্তি।


কাউকে জাজ করে লাভ নেই। সে কখনও আপনার মনের মতো করে নিজেকে বদলে ফেলবে না, বড়োজোর বদলে ফেলার অভিনয় করতে পারে নেহায়েত বাধ্য হলে। যদি তার সাথে থাকতেই চান, তবে তাকে গ্রহণ করার মতো নিজের মনটাকে তৈরি করে ফেলুন, কিংবা ভিন্ন পথে হাঁটুন। অন্য কাউকে বা নিজেকে অশান্তিতে রেখে বাঁচার মতো অতটা বড়ো জীবন সঙ্গে দিয়ে আমাদের এ পৃথিবীতে পাঠানো হয়নি। মুখে হাসি রেখে তাকে রাখুন, কিংবা মুখে হাসি আনতে তাকে ছাড়ুন। যে যার মতো। তাকে তার মতো থাকতে দিন, আপনিও থাকুন আপনার নিজের মতো। সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখার এটিই সবচেয়ে ভালো রাস্তা।

Copy

No comments:

Post a Comment

প্রকৃত পুরুষের কাছে একজন রমণীর মূল্যায়ন।

 💘প্রকৃত পুরুষের কাছে একজন রমণীর মূল্যায়ন। 🌻 বেশিরভাগ পুরুষই তাদের মায়ের কাছ থেকে ভালোবাসা পাননি, তাই তারা অবচেতনভাবেই নারীদের মাধ্যমে সে...