শুনেছিলাম নারীর জন্ম হয় পুরুষের বাম পাঁজরের হাড়ের অংশ থেকে, তাই চেয়েছিলাম তুমি যেনো হও আমার পাঁজরের হাড়। পৃথিবী সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তায়ালা মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করে রেখেছেন, আমি চেয়েছিলাম তুমি যেনো থাকো আমার সেই পূর্ব নির্ধারিত ভাগ্যে। মানুষ অতীত জানে আর বর্তমান বুঝে কিন্তু সব মানুষের ভবিষ্যৎ অজানা; আমি তোমাকে চেয়েছিলাম আমার সেই অজানা ভবিষ্যতে। আপন মানুষ নাকি থাকে মানুষের হাতের রেখায়, আমি যত্ন করে চেয়েছিলাম আমার হাতের কোন একটা রেখায় যেন তুমি থাকো।
তুমিও চাইলে হইতো,
আমাদের ছোট্ট একটা সংসার হতো, পুরনো সম্পর্কে প্রতিদিন নতুন করে প্রেম হতো, আমাদের একটা থাকার ঘর হতো। জানালায় উঁকি মেরে চাঁদ দেখা হতো, ভোরের হাওয়া শিশিরে ভেজা ঘাসের উপর একসাথে হাটা হতো, গোধুলির বিকালে তোমার চুলে বিনুনি বাঁধা হতো। মাঝেমধ্যে এক জোড়া গোলাপ হতো, একটা বই দুজনের পড়া হতো। একসাথে আমাদের হাসাহাসি হতো, একসাথে কাঁদা হতো; আমাদের রাগ হতো, অভিমান হতো। আমাদের ভালোবাসা হতো, একসাথে আমাদের বয়স ফুরাইতো।
কিন্তু তুমিই চাইলেনা!
তবুও তুমি আমার শ্রেষ্ঠ নারী।
তুমি চাওনি বলে পুরো পৃথিবী তোমাকে ভিন্ন চোখে দেখলেও আমি তোমায় দেখি শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়া মহারাণী হিসেবে। পৃথিবীটা তোমায় ভুল ভাবলেও আমি তোমায় ভাবি সবচেয়ে সুন্দর সঠিক মানুষের রূপে। গোটা পৃথিবীর লোকেরা তোমায় ঘৃণা করলেও, আমি তোমায় ভালোবাসি পৃথিবীকেই ঘিরে থাকা সমস্ত ভালোবাসার ভালোবাসার সমান। পুরোটা পৃথিবীতে জুড়ে থাকা ভয় যদিও চেপে ধরে তোমায়, তবুও তুমি আমার কাছে সাহসী নারী। পৃথিবীর সমস্ত মানুষ তোমায় ছোট করে দেখলেও, তুমি আমার বিশাল সমুদ্র। তোমাকে ঘিরে সমস্ত বস্তু তোমায় কখনো দেখতে অপছন্দ করকেও, তুমি আমার উজ্জল নক্ষত্র। আমাকে চাওনি বলে তোমাকে কেউ দূর্বল হৃদয়ী ভাবলেও, তুমি আমার কাছে পাহাড়ের মতো অটল। তুমি ফুল ছিলেনা আমার, কিন্তু তুমি ছিলে মহাবিশ্বের সবচেয়ে সুরভী; তুমি চাঁদ ছিলেনা, তবুও তোমার বিষ্মিত একা হাসির দৃশ্য ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জোসনাময় রূপালী সুখ।
তুমি আমার সর্বকালের সেরা সুন্দরী, তুমি মহাবিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মায়াবতী। তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে কোমল, তুমি হৃদয়স্পর্শী মমতাময়ী, তুমি শতাব্দীর পুরনো আদুরিনী। তুমি ইতিহাসের সবচেয়ে রূপবতী, তুমি যুগের বিজয়ী মহীয়সী। তুমি গুণবতী, তুমি ভাগ্যবতী।
তবুও আমি তোমায় ভালোবেসেছি কোন কারণ ছাড়া, কারণ তুমি নিজেই এক টুকরো ভালোবাসা।
কিন্তু তোমাকে পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়।
তোমার মাথায় বড্ড স্নেহে রাখা তোমার বাবার হাতের কাছে বরাবরই তুচ্ছ আমার ভালোবাসা। দারুণ অসহায় ভঙ্গি নিয়ে তোমার হাত চেপে ধরা মায়ের চেয়ে সস্তা আমার ভালোবাসা। “আমরা তোর ভালো চাই” কথাটার কাছে সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে আমার ভালোবাসা। “এবার আমাদের সম্মানের দিকে তাকা” এই কথার মর্মের চেয়ে হালকা আমার ভালোবাসা। এসব বলতে গিয়ে তোমার বাবার কন্ঠস্বর ভারী হয়ে আসা, তোমার মায়ের চোখ ভিজে ওঠার অনুভূতির কাছে একদম সামান্য অনুভূতি আমার ভালোবাসা। ভাই বোনের কটুকথা আর প্রতিবেশী লোকের বাহবার চেয়ে অসুন্দর আমার ভালোবাসা। তারপর তোমার নেওয়া কঠিন সিদ্ধান্তের চেয়ে দূর্বল আমার ভালোবাসা। এভাবে তুমি পুরোপুরি ভাবেই হারিয়ে গেলে; তুমি আর রইলেনা দৃশ্যতে, তুমি রইলেনা আকাশে কিংবা বাতাসে, তুমি আর রইলেনা কোথাও। আর আমিও হারিয়ে ফেললাম এমন একজনকে, যাকে ভালোবাসা বাকি আরো খুব।
তুমি এখানেও বাবার শ্রেষ্ঠ কন্যা, মায়ের দায়িত্বশীল মেয়ে, তুমি বড় বোনের গর্ব, ছোট ভাই বোনের অনুপ্রেরণা। তুমি প্রতিবেশীদের অহংকার। তুমি সবকিছুতে বিজয়ী, তুমি শ্রেষ্ঠ, তুমি মহারানী। তুমি এক মহাপুরুষের অর্ধাঙ্গিনী, তুমি ভবিষ্যৎ সন্তানের মমতাময়ী মা। তুমি শাশুড়ীর আঁচলের প্রিয় বউ, তুমি ননদের পছন্দের সেরা ভাবি, তুমি ঘরের রাণী, তুমি দায়দায়িত্বশীল নারী।
নারী ৪ ভাবে সোহাগিনী হয়, তুমি সেই ৪ ভাবে সোহাগিনী।
-তুমি বাবার কন্যা হিসেবে সোহাগিনী
-ভাইয়ের বোন হিসাবে সোহাগিনী
-স্বামীর স্ত্রী হিসাবে সোহাগিনী
-তুমি হবে ভবিষ্যৎ সন্তানের মা হিসেবে সোহাগিনী
তারপর নিয়ম করে সমুদ্রে ডেউ বয়ে চলবে, হিমালয়ে বরফ গলবে, সময় মতো চাঁদ উঠবে, সূর্য অস্ত যাবে। দলবেঁধে জোনাকিরা আলো ছড়াবে, মহাকাশে রকেটগুলো সময় মতো ছুটবে। পৃথিবীর সবকিছু নিয়ম অনুপাতে হবে। দিন যাবে, সপ্তাহ আসবে, মাস গুনতে গুনতে বছর ফুরাবে; যুগের পর যুগ চলে যাবে। কিন্তু আমাদের আর দেখা হবেনা, আমাদের আর কথা হবেনা। নিয়ম ভেঙে তুমি আমার হলেইনা।
যে নিয়ম মেনে চলে গেলে, সে নিয়মে ষোলআনা সুখ হবে, হাসিখুশি জীবন হবে। হৃদয় স্পর্শী আনন্দ হবে, কখনো গান, কখনো কবিতা, মাঝেমধ্যে গোলাপ আবার উপন্যাস; সবই তোমার হবে। দামী উপহার, সুস্ক চুমু, তুমুল সুখময় যৌনতা মাখামাখি রাত। থিয়েটার, শপিংমল, পাহাড় সমুদ্র। তোমার সবই হবে, এমনকি তোমার ভালোবাসাও হবে, তুমি মমতা নিয়ে আবার ভালোবাসবে। এভাবে তোমার জীবনের কোথাও এবার আমিও রইলাম না, মনে মস্তিষ্কে রইলাম না, না পাওয়ার দুঃখতেও না; কারণ আমার না হওয়াতে দুঃখ তোমায় কোনদিন স্পর্শও করবেনা।
তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে রূপবতী, তুমি সর্বকালের সেরা সুন্দরী; তুমি স্বর্গীয় সুরের কন্ঠ স্বৈরী। তুমি আমার দেখা শ্রেষ্ঠ নারী। তুমি সুখেরই প্রাপ্য।
আমি তোমাকে কোন কারণ ছাড়া ভালোবাসার মতো, কোন ছাড়াই সারাজীবন মনে রাখবো। হাওয়াতে তোমার নাম উচ্চারণ করবো, গাছে খোদাই করে লিখবো, নিঃশব্দে তোমার নাম জোপবো।
তুমি আমায় চাইলেনা, আর মনেও রাখলেনা,
মনে রাখার বাধ্যবাধকতা নেই।
কিন্তু আমি তোমায় মনে রাখবো, কারণ অল্প সময়ের জন্য হলেও আমি তোমার মনে ছিলাম। আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করাকালীন তোমার মনে আমাকেই মনে রেখেছো। কৃতজ্ঞতা আদায়ের জন্য হলেও তোমার কথা মনে রাখা আমার উচিৎ।
তুমি সত্যি শ্রেষ্ঠ!