মানুষ তার জীবনের একটি বড় অংশ ‘অপেক্ষা’ করে কাটিয়ে দেয়। জীবনের জন্য অপেক্ষা, জীবন পেলে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা। উপেক্ষার জন্য অপেক্ষা, অপেক্ষার জন্য অপেক্ষা। আক্ষেপের অপেক্ষা।
ভোরের সূর্য উঠলে, দুপুরের সূর্য বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার অপেক্ষা, সন্ধ্যা ঘনালে রাত নামার জন্য অপেক্ষা। গভীর রাতের ঘনত্ব বাড়লে আবার ভোরের জন্য অপেক্ষা। ভোরের পাখির কিচিরমিচির শুনলে মানুষ তখন একাকিত্বের হাফ ছেড়ে বাঁচে। এরপর এই যানজটের শহরে গন্তব্যে পৌঁছানোর অপেক্ষা। পৌঁছে গেলে ঘরে ফেরার অপেক্ষা।
ঘরে ফিরে মানুষ অপেক্ষার ছলে একটুখানি প্রশান্তির খোঁজ করে। সেও দীর্ঘ অপেক্ষা।
রাতের আকাশের চাঁদ, চাঁদের পাশের ধ্রুবতারা, দিনের সূর্য, নক্ষত্র, চন্দ্রের গ্রহণ, সূর্যের গ্রহণ, আকাশ, অবকাশ, নিরবে থাকা মহাকাশ— ধ্রুবতারার পাশে জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকা একটুকরো নিমের ডাল। সে ডালের পাতা! সবাই অপেক্ষা করে থাকে।
প্রিয় মানুষের জন্য অপেক্ষা, অপ্রিয়তা থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখার অপেক্ষা। জীবনের সবটুকু আক্ষেপকে ভুলে থাকবার অপেক্ষা, ভুলে গেলে আবার স্মরণ করার অপেক্ষা। স্মৃতিকে ভুলে যাবার অপেক্ষা, স্মৃতিকে আবার আঁকড়ে ধরার অপেক্ষা। শতবছরের প্রতীক্ষার জন্য অপেক্ষা।
সুখের সন্ধানে অপেক্ষা, দুঃখকে হাত বাড়িয়ে খোঁজার অপেক্ষা। কখনো জোয়ার, আবার কখনো ভাটার জন্য অপেক্ষা।
আমরা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করি। একটানা বর্ষণে অপেক্ষা করি রোদের জন্য। কাছের মানুষের জন্য অপেক্ষা, কাছের মানুষগুলো চলে যাবার যে ভয়— সে ভয়ও অপেক্ষায় রাখে৷ হঠাৎ কখনো চলে গেলে তার ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা।
এইযে পাহাড়, সমুদ্র— কবিতার কথা; এই সবকিছুর জন্য মানুষ অপেক্ষা করে। আক্ষেপ, আপেক্ষিকতা; সবকিছুই অপেক্ষা করে। অপেক্ষা নিজেও নিজের জন্য অপেক্ষা করে।
জীবনের জন্য অপেক্ষা, জীবন পেলে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা। উপেক্ষার জন্য অপেক্ষা, অপেক্ষার জন্য অপেক্ষা। আক্ষেপের অপেক্ষা। সাড়ে তিনহাত কবর, কবরের বাসিন্দা আসার সাথে সাথে দুই ফেরেস্তা; তারাও অপেক্ষা করে।
মৃত মানুষও অপেক্ষা করে। শুধু মৃত মানুষের জন্য কেউ অপেক্ষা করেনা। মৃত মানুষের জন্য শুধুই জমে থাকে আক্ষেপ।
No comments:
Post a Comment