Tuesday, July 24, 2018

যে ১০টি কথা আপনার শিশুকে কখনোই বলবেন না!





১। “তুমি পচা”
শিশুরা অবুঝ। তারা স্বর্গের সন্তান। তারা নিষ্পাপ। কিন্তু তাই বলে তাদের আত্মসম্মানবোধের কোন কমতি নেই। তারা ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক। তার জন্যে তিরস্কারও করা যেতে পারে, তবে তা মোটেও নেতিবাচক ভঙ্গিতে নয়। “তুমি খারাপ”, এই সাধারণ কথাটাও তার মধ্যে হীনম্মন্যতা সৃষ্টি করতে পারে। নেগেটিভ কথা বলতে হবে পজেটিভ ভঙ্গিতে। যেমন, “তুমি তো অনেক ভালো। ভালো বাবুরা কি অমন আচরণ করে? এতে অন্যেরা কষ্ট পায় না?”। এতে তার প্রশংসা করে উৎসাহও দেয়া হলো, এবং অন্যকে কষ্ট দেয়া ঠিক নয়, এই বোধও তার মাঝে জাগ্রত হলো।
২। ‘না’
সবসময় না শুনতে শুনতে তারা আপনার প্রতি শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস হারাতে পারে। একদম চাছাছোলা না এর বদলে তাকে বিকল্প কিছু ব্যবহারের সুযোগ দিতে পারেন। যেমন, “এ্যাই, চিৎকার করবা না” এর দলে বলতে পারেন, “একটু আস্তে কথা বলতে পারো না সোনা!” অথবা “বাসার মধ্যে খেলবে না” এর বদলে বলুন, “বাইরে গিয়ে খেলো লক্ষ্ণী বাবা”।
৩। “চুপ কর, আর একটি কথাও নয়”
-এই কথাটি আপনার এবং তার মধ্যিকার সেতুটা গুড়িয়ে দেয়। তাকে বলতে দিন, যুক্তি উপস্থাপনের সুযোগ দিন, হোক না খানিক তর্ক! তার ভুলটা ধরিয়ে দিন। তার কথাও মন দিয়ে শুনুন। এই আচরণ তার মধ্যে একটা বোধ সৃষ্টি করবে, “আমার কথারও গুরুত্ব আছে”। সেই সাথে আপনার প্রতি সম্মানও বৃদ্ধি পাবে। জোর করে চাপিয়ে দেয়া যে কোন কিছুই শিশুর জন্যে ক্ষতিকর।
৪। “তুমি কেন ওর মতো হতে পারো না?”
-এটা খুব কমন এবং মারাত্মক ক্ষতিকর একটা বাক্য। এতে যার সাথে তুলনা করে বলা হচ্ছে, তার প্রতি সে ঈর্ষান্বিত হবে এবং সম্পর্কের মান নেমে যাবে। নিজেকে সে ব্যর্থ মনে করবে। তার আত্মবিশ্বাস কমে যাবে।
৫। “যাও তো এখান থেকে!”
আপনার শিশুর কাছে আপনিই সব। সে আপনার কাছ থেকে ভালোবাসা চায়, মনোযোগ চায়। তাকে চলে যেতে বলা, অথবা তার কাছ থেকে চলে যেতে চাওয়া, এসব তার কোমল মনে গভীর প্রভাব ফেলে।
৬। “কেউ তোমার মতো বাচ্চা চায় না”
সমস্যাগ্রস্ত শিশুরা কিন্তু আমাদের আচরণেরই বাইপ্রোডাক্ট। তারা যদি ভালো আচরণ শিখতে না পারে, তবে তার দায় আমাদেরই। কারণ আমাদের দেখেই তারা শেখে। আমাদের কারণেই তারা পৃথিবীতে এসেছে এবং জীবন যাপন করছে। তাই কোনভাবেই তাদের কে এমন কথা বলা উচিত নয়।
৭। “তুমি এটা পারবে না”
অনেক সময় তারা সাধ্যের অতীত কিছু করতে চায়। সেক্ষেত্রে সরাসরি না বলে ব্যাপারটা অন্যভাবে সমাধা করতে পারেন। ধরুন, সে একটি ভারী চেয়ার তুলতে চাইলো। তাকে এভাবে বলুন, “দেখো পারো কি না”, অথবা “তুমি ব্যথা পাবে সোনা, আমি করে দিই”। সবচেয়ে ভালো হয় যদি বলেন, “ চলো দুজনে মিলে করি”। এতে করে চেয়ারও তোলা যাবে, সাথে সে দলগতভাবে কাজ করার শিক্ষাও পাবে।
৮। “ছেলেরা/মেয়েরা এটা করে না”
শিশুরা তো শিশুই। তাদের মধ্যে লিঙ্গবিভেদ করা ঠিক না। সে তার মত করে চলুক। বাধা দিলে সে বরং জীবনের নব নব রূপ দেখা থেকে বঞ্চিত হবে। তারা হোক আরো কৌতুহলী, জিজ্ঞাসু এবং দক্ষ।
৯। “দাঁড়াও, তোমার বাবা/মা আসুক!”
এটা বহুলচর্চিত একটি ভুল। এতে শিশুরা উদ্বিগ্ন এবং শঙ্কিত হয়ে পড়ে, বিশেষ করে বারবার যদি এমন বলা হয়। যদি সে বারবার কোন একটা ভুল করতেই থাকে তাহলে আপনার অর্ধাঙ্গী/অর্ধাঙ্গীনিকে জানান ব্যাপারটা এবং আলোচনা করুন। অথবা বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করুন, “তোমার বাবা/মা’কে তুমি বলবে নাকি আমি তাকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলবো?” । এভাবে আপনার শিশুকে তার ভুলের দায়ভার নিতে শেখান।
১০। “এটা করো না, তুমি বড় হয়ে গেছ”
শৈশব তো একবার গেলে আর ফিরে আসবে না। তাই তাকে উপভোগ করার স্বাধীনতা দিন। সময় হলে বয়সের ভার সে নিজেই উপলব্ধি করবে। তার ওপর বয়স চাপিয়ে দেয়ার দরকার নেই। চাইলে আপনিও তার সাথে খেলায় মেতে উঠুন। আপনার শিশুকে আনন্দে রাখার দায়িত্ব তো আপনারই, তাই না? 

No comments:

Post a Comment

নিজেকে সরিয়ে নেওয়া মানে পরাজয় নয়—এটা এক ধরনের আত্মরক্ষা, আত্মসম্মানের ভাষা

 নিজেকে সরিয়ে নেওয়া মানে পরাজয় নয়—এটা এক ধরনের আত্মরক্ষা, আত্মসম্মানের ভাষা একটা সময় ছিল, যখন মানুষ ধরে রাখার জন্য প্রাণপণে লড়ে গেছি। মনে হত...