"তোমার অপেক্ষায়"।
তোমার অপেক্ষায়
একটি প্রেম, বিরহ ও পুনর্মিলনের গল্প
অধ্যায় ১: প্রথম দেখা
রাজীব তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। একজন বইপাগল, একটু চুপচাপ, কিন্তু হৃদয়ে এক অদ্ভুত রোমান্টিকতা লুকিয়ে ছিল। সে নিয়মিত কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে গিয়ে বই পড়ত। সেদিন হঠাৎ করেই লাইব্রেরির নিরিবিলি এক কোণায় বসে পড়ছিল শেলীর কবিতা — এমন সময় সামনে এসে বসে একজন মেয়ে।
মেয়েটির নাম ছিল মায়া। বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। মায়া যেমন চঞ্চল, তেমনি বুদ্ধিদীপ্ত — তার চোখে ছিল একধরনের অদ্ভুত আকর্ষণ। রাজীবের বইয়ের পাতার চেয়েও সেই চোখ তাকে বেশি টানল সেদিন।
প্রথমদিন শুধু চোখাচোখি। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই বই আদান-প্রদানের অজুহাতে কথাবার্তা শুরু হলো। লাইব্রেরি শেষে চা, বিকেলবেলা ক্যাম্পাসের রোদের নিচে হাঁটাহাঁটি — ধীরে ধীরে একটা গল্প তৈরি হচ্ছিল। রাজীব অনুভব করছিল, তার নিঃসঙ্গ জীবনটা মায়ার সঙ্গে রঙিন হয়ে উঠছে।
অধ্যায় ২: অজানা টান
মায়া ছিল আলাদা ধরনের মেয়ে। সে কারও কথা শুনে চলত না, নিজের মনমতো জীবনযাপন করত। রাজীব তার এই স্বাধীনচেতা মনোভাবের প্রতি মুগ্ধ হলেও মাঝে মাঝে দুশ্চিন্তায় পড়ত — ‘সে কি আমাকে সত্যি চায়?’
একদিন রাজীব সাহস করে বলেই ফেলল,
“মায়া, আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করি প্রতিদিন... হয়তো এটা ভালোবাসাই।”
মায়া হেসে বলল,
“ভালোবাসা এত তাড়াতাড়ি হয় রাজীব? আমি জীবনটাকে এখনো চিনে উঠতে পারিনি। ভালোবাসা চাই, কিন্তু ভয় পাই।”
রাজীব হতাশ হলেও বুঝতে পারল — মায়ার ভেতরে একটা আঘাত লুকিয়ে আছে। সে অপেক্ষা করল, সময়কে বিশ্বাস করল।
অধ্যায় ৩: দূরত্ব
সময় যতই এগোতে থাকল, মায়া যেন রাজীবের কাছ থেকে সরে যেতে লাগল। ফোনে কম কথা, মেসেজে দেরি, দেখা হলে চোখে অস্থিরতা।
একদিন রাজীব জিজ্ঞেস করল,
“তুমি কি কাউকে ভুলতে পারোনি মায়া?”
মায়া চোখ নামিয়ে বলল,
“আমি একবার খুব ভালোবেসেছিলাম... কিন্তু সে আমার ভালোবাসার মানে বোঝেনি। তাই এখন আবার ভালোবাসতে ভয় লাগে।”
রাজীব বলল,
“আমি তোমার অতীত না, আমি তোমার বর্তমান হতে চাই। যদি আমাকে একটা সুযোগ দাও, আমি প্রমাণ করব যে আমি আলাদা।”
মায়া কিছু বলল না। চলে গেল। সেদিনের পর আর দেখা হয়নি অনেকদিন।
অধ্যায় ৪: দীর্ঘ অপেক্ষা
তিন বছর কেটে গেছে। রাজীব এখন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক। সে তার জীবনে অনেক কিছু পেয়েছে, কিন্তু মায়াকে হারিয়ে এক খালি জায়গা থেকে গেছে তার ভেতরে।
সে মাঝে মাঝে ফেসবুকে মায়ার প্রোফাইল খোঁজে। নতুন ছবি নেই, কোনো পোস্টও না। ফোন নম্বর বদলে গেছে।
তারপর হঠাৎ একদিন...
বইমেলায় রাজীব একটা বুকস্টলে বই দেখছে, হঠাৎ কেউ তার পেছন থেকে বলে,
“শেলীর কবিতা এখনো পড়ো?”
রাজীব ঘুরে দাঁড়ায়। মায়া।
চোখেমুখে বয়সের ছাপ লেগেছে, কিন্তু সেই চেনা হাসি, সেই পরিচিত চোখ।
“তুমি... কোথায় ছিলে এতদিন?”
মায়া বলল,
“আমি নিজেকে খুঁজছিলাম... অনেক ভুল করেছি, কিন্তু একদিন বুঝলাম, সত্যিকারের ভালোবাসা কাউকে চোখে চোখে খুঁজে পাওয়া যায় না — তাকে হৃদয়ে ধরে রাখতে হয়। আর তুমি তো কখনো ছাড়ো নি। সবসময় আমার অপেক্ষায় ছিলে।”
রাজীবের চোখ ভিজে যায়।
“তুমি ফিরে এসেছো... এইটুকুই অনেক।”
তারা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। ব্যস্ত শহরের ভিড়ে, বুকমেলায়, পেছনে হাজারো শব্দ — কিন্তু তাদের জন্য যেন সময় থেমে গেছে।
শেষ অধ্যায়: ভালোবাসা ফিরে পাওয়া
রাজীব ও মায়া একসঙ্গে বসে চা খায়। ক্যাম্পাসে আবার একদিন ঘোরে। তাদের জীবনে ফিরে আসে পুরোনো গান, পুরোনো স্বপ্ন।
ভালোবাসা সবসময়ই সহজ নয়। তবু যারা অপেক্ষা করতে জানে, তাদের জন্য কোনো না কোনো এক ভোরে আলো ঠিকই ফিরে আসে।
শেষ।
ভালোবাসা হারিয়ে গেলেও যদি সেটা সত্যি হয়, তবে একদিন ঠিকই ফিরে আসে।