Saturday, February 13, 2016

বসন্ত

বসন্ত অযুত বৎসর আগে হে বসন্ত, প্রথম ফাল্গুনে মত্ত কুতূহলী, প্রথম যেদিন খুলি নন্দনের দক্ষিণ-দুয়ার মর্তে এলে চলি, অকস্মাৎ দাঁড়াইলে মানবের কুটিরপ্রাঙ্গণে পীতাম্বর পরি, উতলা উত্তরী হতে উড়াইয়া উন্মাদ পবনে মন্দারমঞ্জরী, দলে দলে নরনারী ছুটে এল গৃহদ্বার খুলি লয়ে বীণা বেণু-- মাতিয়া পাগল নৃত্যে হাসিয়া করিল হানাহানি ছুঁড়ি পুষ্পরেণু। সখা, সেই অতিদূর সদ্যোজাত আদি মধুমাসে তরুণ ধরায় এনেছিলে যে কুসুম ডুবাইয়া তপ্ত কিরণের স্বর্ণমদিরায়, সেই পুরাতন সেই চিরন্তন অনন্ত প্রবীণ নব পুষ্পরাজি বর্ষে বর্ষে আনিয়াছ-- তাই লয়ে আজো পুনর্বার সাজাইলে সাজি। তাই সে পুষ্পে লিখা জগতের প্রাচীন দিনের বিস্মৃত বারতা, তাই তার গন্ধে ভাসে ক্লান্ত লুপ্ত লোকলোকান্তের কান্ত মধুরতা। তাই আজি প্রস্ফুটিত নিবিড় নিকুঞ্জবন হতে উঠিছে উচ্ছ্বাসি লক্ষ দিনযামিনীর যৌবনের বিচিত্র বেদনা, অশ্রু গান হাসি। যে মালা গেঁথেছি আজি তোমারে সঁপিতে উপহার তারি দলে দলে নামহারা নায়িকার পুরাতন আকাঙক্ষাকাহিনী আঁকা অশ্রুজলে। সযত্নসেচনসিক্ত নবোন্মুক্ত এই গোলাপের রক্ত পত্রপুটে কম্পিত কুণ্ঠিত কত অগণ্য চুম্বন-ইতিহাস রহিয়াছে ফুটে। আমার বসন্তরাতে চারি চক্ষে জেগে উঠেছিল যে-কয়টি কথা, তোমার কুসুমগুলি হে বসন্ত, সে গুপ্ত সংবাদ নিয়ে গেল কোথা? সে চম্পক, সে বকুল, সে চঞ্চল চকিত চামেলি স্মিত শুভ্রমুখী, তরুণী রজনীগন্ধা আগ্রহে উৎসুক-উন্নমিতা, একান্ত কৌতুকী, কয়েক বসন্তে তারা আমার যৌবনকাব্যগাথা লয়েছিল পড়ি। কণ্ঠে কণ্ঠে থাকি তারা শুনেছিল দুটি বক্ষোমাঝে বাসনা-বাঁশরি। ব্যর্থ জীবনের সে কয়খানি পরম অধ্যায় ওগো মধুমাস, তোমার কুসুমগন্ধে বর্ষে বর্ষে শূন্যে জলে স্থলে হইবে প্রকাশ। বকুলে চম্পকে তারা গাঁথা হয়ে নিত্য যাবে চলি যুগে যুগান্তরে, বসন্তে বসন্তে তারা কুঞ্জে কুঞ্জে উঠিবে আকুলি কুহুকলস্বরে। অমর বেদনা মোর হে বসন্ত, রহি গেল তব মর্মরনিশ্বাসে-- উত্তপ্ত যৌবনমোহ রক্তরৌদ্রে রহিল রঞ্জিত চৈত্রসন্ধ্যাকাশে।

No comments:

Post a Comment

নিজেকে সরিয়ে নেওয়া মানে পরাজয় নয়—এটা এক ধরনের আত্মরক্ষা, আত্মসম্মানের ভাষা

 নিজেকে সরিয়ে নেওয়া মানে পরাজয় নয়—এটা এক ধরনের আত্মরক্ষা, আত্মসম্মানের ভাষা একটা সময় ছিল, যখন মানুষ ধরে রাখার জন্য প্রাণপণে লড়ে গেছি। মনে হত...